ফুটবল প্রেমিদের জাতীয় পতাকার অবমাননায় হৃদয়ে রক্তক্ষরণ!


হাফিজুর রহমান::
দরজায় কড়া নাড়ছে ফুটবল বিশ্বকাপ। আগামী ২০ নভেম্বর পর্দা উঠছে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের।
এরই মধ্যে ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে ফুটবল প্রেমিদের উন্মাদনার শেষ নেই। বিরল সব কাজ করে ক্রমেই সংবাদের শিরোনাম হচ্ছেন ফুটবল প্রেমিরা। তবে একটা কাজ যা একটি দেশ, দেশে বসবাসরত মানুষ তাদের আবেগ ও আইন নিয়ে খেলে যাচ্ছে। ফুটবল বিশ্বকাপ কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার চরম অবমাননা করা হচ্ছে।
জাতীয় পতাকা হচ্ছে একটি দেশের গৌরব ও সম্মানের বিষয়। একটি দেশের সার্বভৌমত্ব, আদর্শ ও প্রতীক হিসেবে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রেরই জাতীয় পতাকা রয়েছে । জাতীয় পতাকার সুনির্দিষ্ট আয়তন , উত্তোলনের নিয়ম সুস্পষ্টভাবে সংবিধান দ্বারা সংরক্ষিত আছে। এর ব্যতিক্রম হলে তথা অবমাননা করা হলে আইনের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়৷
একটি দেশের পতাকা শুধু মাত্র এক খণ্ড কাপড়ই নয় বরং সেই দেশের ইতিহাস,ঐতিহ্য,মর্যাদা ও আত্নত্যাগের প্রতিকও বটে। তেমনিই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাও শুধুমাত্র লাল সবুজের এক খণ্ড কাপড় নয় বরং এটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে কেনা একটি প্রতিক। কিন্তু ফুটবল প্রেমিদের অন্ধ ভক্ত ও অতিউৎসাহের কারণেই বাঙালির রক্তে কেনা ইতিহাস,ঐতিহ্য ও মর্যাদার ধারক বাহক এই পতাকাটির অবমাননা যেন নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের অবর্ণনীয় কষ্টের বিনিময়ে আমরা এ লাল-সবুজ পতাকা পেয়েছি। এ পতাকা আমার পরিচয়। তাই জাতীয় পতাকাকে অবহেলার সুযোগ নেই। জেনেই হোক আর না জেনেই হোক অবমাননা থেমে নেই। অথচ এ পতাকা বিকৃতি বা অবমাননা হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়।
লাল-সুবজ পতাকা হৃদয়ে ধারণ করে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশ। ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল এ দেশেরই মানুষ। নয় মাসের যুদ্ধে দেশ স্বাধীন করে আপন অস্তিত্ব, অধিকার, চেতনা ও মূল্যবোধ বিশ্ববাসীর কাছে ছড়িয়ে দিয়েছিল এ দেশই। ৩০ লাখ শহীদের রক্তে রাঙা আর নির্যাতিত ৪ লাখ মা-বোনকে জড়িয়ে রাখা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আমাদের অর্জন, আমাদের গর্ব, আমাদের অহঙ্কার। এ পতাকার ছায়াতলে আমরা বারবার একত্রিত হই। মিছিল করি পতাকা হাতে। প্রজন্মান্তরে সঁপে দিই এ পতাকা- এ আশ্বাসে যে, নতুন প্রজন্মই সমুন্নত রাখবে আমাদের বিজয়, আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের একাত্তর। এর অবমাননা মানে জাতির হৃদস্পন্দন থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। জাতীয় পতাকার অসম্মানের অর্থ বাংলাদেশের জন্মইতিহাস উপেক্ষা করা। সেই আবহমান কাল থেকে প্রত্যেক পতাকা কোন জাতি, রাষ্ট্র বা ধর্মের পরিচায়ক। সুতরাং সেই পতাকার মান রক্ষার্থে সংগ্রাম, রক্তপাত, আত্নবিসর্জন ও যুদ্ধ করতে ও কোন দেশ বা জাতি দ্বিধাবোধ করেনা। প্রত্যেক পতাকায় স্ব-স্ব দেশপ্রেম ও জাতীয় সম্মানবোধ নিহিত। তবে কোন দেশের খেলোয়াড বা দলের প্রতি যে কোন ব্যক্তি বিশেষের সমর্থন থাকাটা দোষের কিছু নয় ।
কখনো কি নিজেকে কেউ প্রশ্ন করেছেন যে,বাংলাদেশের দল বিজয় অর্জন করলে ও কোন বিদেশী বা প্রতিবেশী দেশের জনতা কি বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে স্বগর্বে মিছিল সমাবেশ করবে?করবে না। কেননা- একটি পতাকা, একটি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গৌরবের মূর্ত প্রতীক।
২০১০ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালে বাংলাদেশে বিদেশি পতাকা ব্যবহার বন্ধে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়েছিলো । ওই রিট আবেদনে বলা হয়, ফুটবল বিশ্বকাপ চলাকালে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দলের বাংলাদেশি সমর্থকরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদেশি পতাকা উত্তোলন করেন। অথচ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা ১৯৭২-এর বিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনৈতিক মিশনগুলো ছাড়া অন্য কোনো স্থানে অন্য রাষ্ট্রের পতাকা উত্তোলন করতে হলে বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
মোদ্দাকথা হলো, বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে পতাকা উড়ানোর যে নিয়ম অনুসরণ করা হয় তাতে প্রথমত, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে অবমাননা করা হয়। দ্বিতীয়ত, অনুমোদন ছাড়াই বিদেশি পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে পতাকাবিধিমালাকে লঙ্ঘন করা হয়।
ফুটবল বিশ্বকাপ প্রতি চার বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়ে যে উন্মাদনা আর উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে তাতে আবেগের একটি প্রভাব থাকবে সমর্থকের মনে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের পতাকা কিংবা আইনের চেয়ে ফুটবলের প্রতি আবেগ কখনোই বড় কিছু নয়। এই পতাকার পেছনে আমাদের সংগ্রাম ও জাতীয় চেতনাকে লালন করে জাতীয় পতাকার সম্মান রক্ষায় সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
আগামী মাস বিজয়ের মাস। বাঙালির প্রত্যাশা,প্রাপ্তি,গৌরব ইতিহাসের মাস। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লাখো বাঙালি রক্তের বিনিময়ে এই মাসেই বিজয় অর্জন করে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো বাঙালি জাতি। সেই ডিসেম্বরেই দেশের আকাশে বিদেশী পতাকা উড়বে সেটি অবশ্যই দেশ প্রেমিক কোনো মানুষ দেখতে চাইবে না। তাই আবেক যেন দেশের আত্নমর্যাদা ক্ষুণ্ণ না করে সেদিকে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
« Where to find Foreign Gal For Marital relationship (Previous News)
Related News

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ
জনতার নিঃশ্বাস::গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে সাপ্তাহিক জনতার নিঃশ্বাস, দৈনিক মুক্ত কাগজ সহ একাধিক পত্রিকায়Read More