‘সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে’ এক মাস, কেমন আছেন ক্রিকেটাররা?

ডেস্ক রিপোর্ট:
সারাবিশ্ব বিভেদ ভুলে গাইছে ঐক্যের জয়গান। তবুও পারছে না কুলিয়ে উঠতে। করোনাভাইরাসে প্রতিদিন দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। দীর্ঘ কয়েক দশকেও এমন থমথমে পরিস্থিতি, উদ্বেগজনক মুহূর্ত কাটায়নি গোটা বিশ্ব।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে সব খেলায় কার্যত ফুলস্টপ পড়ে গেছে। সরকারের লকডাউনের সিদ্ধান্তের আগেই বাংলাদেশের পেশাদার ক্রিকেটাররা নিজেদের ‘সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে’ রেখেছেন। প্রায় এক মাস হল গৃহবন্দি হয়ে আছেন তামিম, মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য, সাব্বির, রুবেল, লিটন, মিরাজরা। মাশরাফিও শুরুতে নিজেকে ‘সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে’ রেখেছিলেন। কিন্তু ক্রিকেটারের পাশাপাশি জননেতা হওয়ায় তাকে পাশে থাকতে হয়েছে সাধারণ মানুষের। তবে নিজের প্রতি সাবধানী মাশরাফি।
‘সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে’ এক মাস কেমন কাটলো ক্রিকেটারদের? উত্তর খুঁজেছে রাইজিংবিডি,
তামিম ইকবাল
‘একদম ক্রিকেটের বাইরে। কখনো কল্পনা করিনি, এতোটা সময় ক্রিকেট ছাড়া কাটাবো কোনো সময়। ছোটকাল থেকেই ক্রিকেট নিয়ে বেড়ে উঠা। ব্যাট-বল এগুলো ছিল নিত্যসঙ্গী। এখন ব্যাট হাতেই নেওয়া হয় না। ঘরের ভেতরে তো আর সেই সুযোগটি নেই।’
‘সময় কাটছে পরিবারের সঙ্গে। সারাদিন ছেলে-মেয়ের সঙ্গে কাটানো হয়। আমি খুব খারাপ আছি বলবো না। একজন সামর্থ্যবান হিসেবে যতটা ভালো থাকার কথা সেরকম আছি। এটা আমার কাছে অনেক বড় সুযোগ পরিবারের সঙ্গে কাটানোর। দেখা যায় ছুটি পেলেও কিন্তু আমরা বাইরে যাচ্ছি, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি। কিন্তু এখন পুরোপুরি পরিবারের সঙ্গে।’
‘ফিটনেস নিয়ে কাজ করছি রোজ। আমি আমার ফিটনেস নিয়ে আগের থেকে অনেক সচেতন। খাওয়া-দাওয়া হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু আবার ঝেরেও ফেলছি।’
‘মোবাইলে কথা হচ্ছে বেশি। টিভি দেখছি। দ্যা টেস্ট: অ্যা নিউ এরা ফর অস্ট্রেলিয়া টিম, এটা দেখা হয়ে গেছে। শুধুমাত্র টেস্ট ক্রিকেটের জন্য একটা দল কিভাবে নিজেদের তৈরি করে, তাদের ভাবনা, তাদের প্রস্তুতি এবং ফলাফল ব্যক্তিজীবনে কতোটা প্রভাব ফেলে সেগুলো মুগ্ধ করেছে।’
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ
‘শুরুতে একটু আপসেট ছিলাম। এখনও আপসেট। সামগ্রিক চিন্তা করলে খুব খারাপ অনুভব হয়। কখনো ভাবিনি নিজেদের কিংবা দেশকে এরকম একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে। নিজে সচেতন আছি। অন্যকে ভালো রাখছি। একদম প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছি না।’
‘নিজের কথা বললে পরিবার নিয়ে ভালো আছি। পেশাদার ক্রিকেটার আমরা। আমাদেরকে বছরের বেশিরভাগ সময়ই থাকতে হয় বাইরে। ঢাকায় থাকলেও দেখা যায় বাসায় সময় দেওয়ার সুযোগ কম। এখন অফুরন্ত সময়। আমরা ভালোই সময় যাচ্ছে।’
‘আমার পরিবার বড় হয়েছে। দ্বিতীয় ছেলের বাবা হয়েছি। করোনার সময়ৃ একটু চিন্তা ছিল, ভয় ছিল। মাশাআল্লাহ এখন পুরোপুরি সুস্থ আছে। বাচ্চার মা’ও ভালো আছে। এখন অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। প্রথম বাচ্চার সময় সেগুলো হয়তো করতে হয়নি। খেলা ছিল, বাইরে ছিলাম। পিতৃত্ব উপভোগ করছি। ভালো লাগছে।’
‘ফিটনেস নিয়ে আমার কাজ করা হচ্ছে। বিসিবির গাইডলাইনের পাশাপাশি নিজের তৈরি করা একটা সূচি অনুসরণ করছি। দুইটা মিলিয়ে আবার একটা ধরে কাজ করা হচ্ছে। ব্যাট-বল থেকে দূরে থাকলেও সবকিছু এখন ঠিকঠাক আছে।’
সৌম্য সরকার
‘আমার বারান্দা থেকে মিরপুর মাঠ দেখা যায়। বারান্দায় গেলে এতো খারাপ লাগে! মন চায় ব্যাট-বল নিয়ে চলে যায়। একা একা নকিং করি। কিন্তু পারি তো না! একদম বোর হয়ে গিয়েছি। ক্রিকেট ছেড়ে এতোদিন কখনো কাটানো হয়নি। আমার বড় ধরনের কোনো ইনজুরিও কখনো হয়নি। তাই জানিও না ওই কষ্টটা যে, আসলে ক্রিকেট থেকে দূরে থাকা কতটা কষ্টের।’
‘কিছুদিন আগেই বিয়ে করেছি। এখন বউ নিয়ে গৃহবন্দি। ঢাকা লিগ শেষে হানিমুনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম। কিন্তু সবকিছুই তো ওলটপালট হয়ে গেল। ঘরে সময় কাটাচ্ছি ভালো লাগছে। এটা-ওটা ট্রাই করছি। কিছুদিন আগে তো রান্নাও করেছি। সময় এভাবেই কেটে যাচ্ছে।’
‘টিভি দেখা হচ্ছে বেশি। আর গল্প করছি। সময় কাটতে চায় না। বাধ্য হয়ে কাটাতে হচ্ছে।’
সাব্বির রহমান
‘আমি রাজশাহীতে আছি। বাবা-মায়ের সঙ্গে। ঢাকা লিগ বন্ধ হওয়ার পরপরই চলে এসেছি। এখানে থাকাতে আমার জন্য ভালো হয়েছে। পুরোপুরি লকডাউন মেনে চলতে পারছি। ঢাকায় থাকলে হয়তো আমাকে বের হতে হতো। ’
‘সময় কাটতে চায় না। কিন্তু আমরা পেশাদার ক্রিকেটার এতোটা অফুরন্ত সময় কখনোই পাই না। পরিবারের সবাই একসঙ্গে সময় কাটাচ্ছি এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক।
‘ফিটনেস ধরে রাখতে বা ঠিক রাখতে আগে যেগুলো রেগুলার করেছি সেগুলো এখনও করছি। সাইক্লিং, পুশ আপ, ডাম্বেল আছে সেগুলা দিয়ে ব্যায়াম করছি। খাওয়া-দাওয়া মেনে খাচ্ছি। এজন্য বাড়তি কিছুর করার প্রয়োজন হচ্ছে না।’
‘খেলা বন্ধ হওয়াতে আমি খুব আপসেট। আমার জন্য ঢাকা লিগ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একটা মিশন নিয়ে এগিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম। আমি দলের বাইরে আছি। ঢাকা লিগ ছিল আমার ফেরার সুযোগ। এটা খুব কাউন্ট হয়। প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে অনেক পরিকল্পনা সাজিয়েছিলাম। প্রত্যাশা করছি সব ঠিক হয়ে যাবে। আমিও নিজের শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করব।’
রুবেল হোসেন
`আয়ান হোসেনের সঙ্গে বেশি সময় কাটছে (রুবেলের ছেলে)। ওকে এর আগে এতো সময় দেওয়া হয়নি। খেলা নিয়েই তো ব্যস্ত থাকি। এজন্য এখন ওর সব দায়িত্ব আমার কাঁধে। ’
‘আমরা মাঠে থাকতে অভ্যস্ত। মাঠকে ঘর বানিয়ে ফেলি। এখন চার-দেয়ালকে কেমন কেমন যেন লাগে। তবুও ছেলের সঙ্গে আছি দেখে ভালোভাবে যাচ্ছে সময়। ’
‘আমি মানুষকে ভালোবাসি। মানুষের পাশে থাকলে ভালো লাগে। যতটা সম্ভব মানুষকে সাহায্য করছি। সামনেও করবো। আল্লাহ আমাকে যতটুকু দিয়েছে ততটুকু দিয়ে করার চেষ্টা করবো। এইতো। তারাই তো আমাদেরকে তারকা বানিয়েছে। তাদের জন্যই তো খেলি। আমাদের এখন তাদের জন্য করা দায়িত্ব।’
‘ফিটনেস নিয়ে টুকটাক কাজ করা হচ্ছে। খুব আহামরি কাজ করছি না। মেইন্টেইন করছি সব কিছু।’
লিটন
‘এক মাস হয়ে গেল…মাঠের দিনগুলো মিস করছি। কেমন যে লাগছে বুঝিয়ে বলতে পারব না। খুব কষ্ট হচ্ছে। নিজের তৈরি করা সূচি ধরে কাজ করছি। বিসিবিও একটা দিয়েছে। সেটাও ঠিক রাখছি। এছাড়া খাচ্ছি, ঘুমোচ্ছি আর ছবি দেখছি। তেমন কিছু করার নেই। দিন কি আর এভাবে কাটে! মনে হচ্ছে এটা একটা কারাগার। আমি কয়েদী (হাসি) ।
‘আমাদের তো তাও বিসিবি আছে। বেতন দেবে। কিন্তু যারা দিনে এনে দিনে খায় তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। আমরা এগিয়ে এসেছি। অনেক ক্রিকেটার এগিয়ে এসেছে। সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসেছে। কিন্তু দেখবেন তাদের কষ্ট হবে। কারণ সংখ্যাটা অনেক। করোনা থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত তাদের কষ্ট থাকবে।’
‘এ মুহূর্তে আসলে ক্রিকেট নিয়ে খুব বেশি ভাবছি না। পুরো বিশ্ব করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। বেঁচে থাকলে অনেক ক্রিকেট খেলতে পারব। এখন ঘরে থাকাই উত্তম।’
মিরাজ
‘বাড়িতে আছি, বরিশাল। গত মাসেই চলে এসেছি। এখানে ভালো আছি। ঘরের থেকে একদমই বের হচ্ছি না। বউ আর মা আছে আমার সাথে। ভালো কাটছে সময়। ’
‘ক্রিকেটের মানুষ আমরা। ক্রিকেট না খেলতে পারলে তো খারাপ লাগবে। কেমন যেন মনে হচ্ছে শরীর একেবারে বসে গেছে। এভাবে গেলে ঝামেলা। দ্রুত ফিটনেসের কাজ শুরু করতে হবে। এখানে ফিটনেসের সুযোগ কম। তারপরও করা যাবে। ’
‘মাঠ দেখলে খারাপ লাগে। মনে হয় এখনই দৌড়ে চলে যাই। কিন্তু কই যাবো। যেদিকে যাবো সেদিকেই তো খারাপ খবর। তাও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। সচেতন আছি। পরিবারকে নিয়ে ভালো আছি।’
Related News
‘সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে’ এক মাস, কেমন আছেন ক্রিকেটাররা?
ডেস্ক রিপোর্ট: সারাবিশ্ব বিভেদ ভুলে গাইছে ঐক্যের জয়গান। তবুও পারছে না কুলিয়ে উঠতে। করোনাভাইরাসে প্রতিদিনRead More
মিরপুর স্টেডিয়ামে অস্থায়ী হাসপাতাল করতে আপত্তি নেই বিসিবির
ক্রীড়া প্রতিবেদক | করোনা আক্রান্তদের পর্যাপ্ত সহায়তা দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। এজন্য নির্ধারিত হাসপাতালেরRead More