জনতার নিঃশ্বাস প্রতিবেদন:: নতুন সদস্য অন্তর্ভূক্তি প্রক্রিয়ায় গঠনতন্ত্র লংঘনের অভিযোগে গাজীপুর প্রেসক্লাব (রেজি নং গা-০৭৭০) এর কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনের কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষ সমাজসেবা অধিদপ্তর নির্দেশ প্রদান করেছে। গাজীপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক এস এম আনোয়ারুল করিম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
সোমবার (২৮ জুলাই) স্বাক্ষরিত চিঠিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বরাবরে পাঠানো হয়েছে। চিঠির বিষয়ে বলা হয়েছে, গাজীপুর প্রেসক্লাব, গাজীপুর সদর, গাজীপুরের কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত রাখা প্রসঙ্গে।
চিঠিতে গত ২২ জুলাইয়েরে একটি চিঠির সূত্র উল্লেখ করে বলা হয়েছে, উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্র স্মারকের পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, জেলা প্রশাসক, গাজীপুর মহোদয়ের পত্র মূলে গাজীপুর প্রেসক্লাব, শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রোড, গাজীপুর সদর, গাজীপুরের নিবন্ধন নম্বর গা-০৭৭০, তারিখ: ০৩/০৬/৩০১৪ খ্রি. এর কার্যকরী পরিষদ নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনায় নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তি প্রক্রিয়ায় গঠনতন্ত্র পরিপন্থী অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। উক্ত অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলো।
উক্ত চিঠির অনুলিপি সদয় জ্ঞাতার্থে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম), গাজীপুরের জেলা প্রশাসক, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (নিবন্ধন), গাজীপুর শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা, গাজীপুর প্রেসক্লাব নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে অনুলিপি দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গাজীপুর প্রেসক্লাবকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের কবল থেকে মুক্ত করে প্রশাসক নিয়োগের দাবিতে গত ১৭ জুলাই গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ও গাজীপুর প্রেসক্লাবের নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করে গাজীপুরের সাংবাদিকদের একটি অংশ। পরে ২০ জুলাই একই দাবীতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা। পরে জেলা প্রশাসকের নিকট একই দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
লিখিত অভিযোগ ও স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়, গাজীপুর প্রেস ক্লাব (রেজিঃ ০৭৭০) এর বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে গঠিত হয়েছিল। ফ্যাসিদের সহযোগী এই কমিটি গঠনতন্ত্র পরিপন্থি নানা কাজকর্ম করে সাংবাদিকদের অধিকার হরণ করেছে। এ কারণে প্রশাসক নিয়োগের দাবিতে রোববার সকালে মানববন্ধন করেছেন গাজীপুরের সর্বস্তরের সাংবাদিক সমাজ।
সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশে কেন্দ্রিয় কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক এবং হেফাজতে ইসলাম গাজীপুর জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুফতি নাসির উদ্দিন খান। মানববন্ধনে জেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা অংশ গ্রহণ করে বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা জানান, গাজীপুর প্রেসক্লাবের গত প্রায় ১৫ বছর যাবত ফ্যাসিবাদের দোসরা কার্যকরী কমিটির দায়িত্বে রয়েছে। এসব কমিটি বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী বিরোধী অথবা নিরপেক্ষ পেশাদার সাংবাদিকদের অনেককে প্রেস ক্লাব থেকে বহিষ্কার করেছে। একইভাবে ভিন্নমতের কোন সাংবাদিককে সদস্যপদ প্রদান করা হয়নি।
বক্তারা আরো অভিযোগ করেন, প্রেসক্লাবে এখন যারা নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন তারা প্রায় সকলেই গাজীপুরের বিতর্কিত সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এবং কুখ্যাত এসপি হারুনের দোসর এবং তাদের সহযোগী ছিলেন। এসব কারণে তারা আওয়ামী বিরোধী অথবা নিরপেক্ষ ও পেশাদার সাংবাদিকদেরকে প্রেস ক্লাবের সদস্য পদ প্রদান করেন নাই। সম্প্রতি প্রেস ক্লাবের সদস্য আহবান করতে গিয়ে তারা গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে বিভিন্ন অগঠনতান্ত্রিক শর্ত আরোপ করে। তারপরও ৫ আগস্টের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ৪৯ জন সাংবাদিক সদস্য ফরম সংগ্রহ করে এবং ৪৪ জন আবেদন জমা দেয়। কিন্তু ফ্যাসিস্টের দোসর প্রেসক্লাবের বর্তমান কার্য নির্বাহী কমিটি নানান অজুহাত দেখিয়ে গঠনতন্ত্র বিরোধীভাবে গোপন ভোটের আয়োজন করে। এবং পরে ৩ জন ব্যতীত কোন সদস্য ভোটে পাস করেনি বলে প্রচার করে সদস্যপদ প্রদান থেকে বঞ্চিত করে।
এমনি প্রেক্ষাপটে, ফ্যাসিবাদের দোসর বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনতন্ত্রের বেশ কয়েকটি ধারা লংঘন করার কারণে এই কমিটি বিলুপ্ত করে যে অধ্যাদেশের আওতায় গাজীপুর প্রেস ক্লাবকে নিবন্ধন প্রদান করা হয়েছে , সেই অধ্যাদেশে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানায়।
মানববন্ধন শেষে সকল সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসক প্রশাসক নাফিসা আরেফিনের নিকট স্মারক লিপি প্রদান করেন। জেলা প্রশাসক স্বারক লিপি গ্রহণ করে কার্যকর ব্যবস্থা নিবেন বলে সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেন।
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রেসক্লাববে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করার চলমান দাবীর প্রেক্ষিতে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে আইন অনুযায়ী প্রশাসক নিয়োগের জন্য প্রেসক্লাবের নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষকে গত ২২ জুলাই চিঠি দেয়া হয়। পরে নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষ গাজীপুর প্রেসক্লাবকে নতুন সদস্য অনন্তভূক্তি করার বিজ্ঞপ্তিতে গঠনতন্ত্র পরিপন্থী শর্তারোপ করার বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করে। কিন্তু তারপরেও প্রেসক্লাবের ৫ আগস্টের আগে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় গঠিত বর্তমান কমিটি এসব আমলে না নিয়ে একতরফা নির্বাচনের পথে এগিয়ে যায়। তারা আগামী ৩ বছর কোন নতুন সদস্য অন্তর্ভূক্তি করবে না মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ নিয়ে গাজীপুরের সাংবাদিকদের প্রেসক্লাবের বাইরে থাকা বিপুল সংখ্যক পেশাদার সাংবাদিকের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।