হানিফ আকন্দ,ত্রিশাল প্রতিনিধি:: ময়মনসিংহের ত্রিশালের ১২নং আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের কাশিগঞ্জে সংলগ্নে অবস্থিত সূতিয়া নদীর শাখা বানারপাড়। এক সময় এই নদীর এই খালে সাঁতার কেটে, মাছ ধরতো স্থানীয় মানুষ। অনেকে খাবার পানি থেকে শুরু করে এই পানি ব্যবহার করতো বাড়ির অন্যান্য কাজেও। নদীমাতৃক দেশ বলা হয় আমাদের এই বাংলাদেশকে। কিন্তু দিন দিন দূষণ আর শাসনের কবলে পড়ে গতিপথ হারাচ্ছে দেশের অধিকাংশ নদীই। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার সূতিয়া নদী এক সময় ঐতিহ্য বহন করত এলাকায়। কিন্তু শিল্পবর্জ্যের ক্রমাগত দূষণে মরে গেছে নদীটি। কালো হয়ে গেছে নদীর পানি। এই পানিতে এখন শুধুই দুর্গন্ধ।নদীটি যে কেবল দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে তাই নয়, এই নদীই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে এলাকাবাসীর। পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি এলাকাবাসীর সুস্বাস্থ্যের জন্যও নদীটি এখন বিরাট হুমকি। চর্মরোগসহ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলায় আকিজ গ্রুপের গড়ে ওঠা কারখানার দূষিত বর্জ্য ও পানি নদীতে ফেলা হচ্ছে।ক্রমাগত এভাবে দূষিত বর্জ্য ফেলার কারণে নদীর পানি কালো হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ফলে নদীতীরবর্তী বেশ কটি ইউনিয়নে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক বিপর্যয়ের পাশাপাশি মানবিক সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, নদীর সব মাছ মরে যাচ্ছে। ফলে জেলের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, নদী দূষণের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে এলাকার ফসলি জমি। এ নদীর পানি এখন কৃষিকাজে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তারপরও যারা ব্যবহার করছেন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাদের জমির ফসল। শুধু তাই নয়; এ নদীর পানি পান করে মারা যাচ্ছে হাঁস-মুরগি। যে কারণে আশপাশের গ্রামগুলোতে হাঁস-মুরগি পালনও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান,‘ওই নদীতে যে পানি রয়েছে তাকে পানি বলার জো নেই। বিষাক্ত বর্জ্যে ওই নদীর পানি এখন মবিলের মতো তরল পদার্থে পরিণত হয়েছে। এই নদীর পানিতে মানুষ নামা তো দূরের কথা, কোনো পশুপাখিও এখন নামে না।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এই নদী দূষণের প্রভাব পড়েছে স্থানীয় জীবনে। দূষিত পানি বিভিন্ন পুকুর ও জলাশয়ে যাওয়ার কারণে সেই সব পুকুর-জলাশয়ের মাছ মারা যাচ্ছে। হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন গৃহপালিত পশুপাখিও মারা যাচ্ছে। আবার এই নদীর পানির কারণে এখানকার জমিতে ভালো ফসল উৎপাদিত হচ্ছে না।’ স্থানীয় কৃষক আব্দুর রহমান জানান, এখানকার জমিতে কেউ কাজ করতে পারছে না। আবার এই জমিতে কাজ করার কারণে অনেক ধরনের রোগবালাই হয়ে থাকে। অন্য একজন কৃষক অভিযোগ করেন, জমিতে আগে যে পরিমাণ ধান হতো এখন আর সে পরিমাণ ধান হয় না। আবার এ বছর ধানের দামও কম। এমতাবস্থায় তাদের পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় নেই। দ্রুতই প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসী। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষে এই বিষয়ে কোন বক্তব্য দিয়ে রাজি হননি।
সোমবার , ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ ইং || ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - হেমন্তকাল || ১০ই জমাদিউস-সানি, ১৪৪৭ হিজরী
ত্রিশালে আকিজ গ্রুপের বিষাক্ত পানি নষ্ট করছে নদী: হুমকিতে পরিবেশ
প্রকাশিত হয়েছে-