মঙ্গলবার , ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ ইং || ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - হেমন্তকাল || ১১ই জমাদিউস-সানি, ১৪৪৭ হিজরী

যুবদল নেতা এমদাদের দখলে ৬ দোকান: অসহায় পার্বতীর পাশে নেই কেউ!

প্রকাশিত হয়েছে-

জনতার নিঃশ্বাস প্রতিবেদন:: পার্বতী রাণী বাপ দাদার আমল থেকেই গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুরে তার বসবাস । হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ হবার কারণে সব সময়ই থাকেন অজানা এক ভীতির মধ্যে। স্বামী কর্মহীন,নিজে পান দোকান পরিচালনা করে চালান সংসার। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমিটিও ঢাকার এক ব্যবসায়ী দখলে রেখেছেন। তার সামনেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘেষা তার ৬টি দোকান ছিল। সেই দোকানগুলোর ভাড়া তুলে ভালোই চলছিল সংসার।  তবে ৫ই আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি এমদাদ শিকদার, তার ভাই এনামুল শিকদার সহ কয়েকজন সশস্ত্র হামলা করে দখল করে নেয় দোকান গুলো। এই বিষয়ে বার বার জয়দেবপুর থানা পুলিশ,যুবদলের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন সমাধান পায়নি পার্বতী রাণী।সবশেষ তিনি বিএনপির মিডিয়া সেল,জেলা যুবদল,গাজীপুর সদর উপজেলা বিএনপি ও স্থানীয় প্রেসক্লাব বরাবরও একটি লিখিত অভিযোগ দেন। যেখানে তিনি অভিযোগ করে বলেন,গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের ভবানীপুর এলাকার বাতেন চৌকিদারের ছেলে এমদাদুল শিকদার ও এনামুল শিকদার তাদের সহযোগীরা সহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ২০২৪ এর নভেম্বরের ১০ তারিখ দুপুর ১২ টায় আমার ভাড়া দেয়া দোকানগুলো ভাংচুর ও লুটপাট করে। পরে তারা সেসকল দোকান দখল করে নেয়। অসহায় পার্বতী একদিকে দরিদ্র অন্যদিকে সংখ্যালঘু হবার কারণে কোথাও বিচার দেবার সাহসটুকু পর্যন্ত পায়নি। এবিষয়ে পার্বতী রাণীর সাথে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন,তারেক রহমান বিভিন্ন বক্তব্যে দখলবাজী ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন তখন আমি কিছুটা সাহস নিয়ে জয়দেবপুর থানা ও যুবদলের কাছে লিখিত অভিযোগ করি। কিন্তু পুলিশ বা যুবদল কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এমদাদ শিকদার এখন আমাকে অভিযোগ তুলে নিতে বার বার হুমকি দিচ্ছে। এমদাদ শিকদার ও এনামুল শিকদার বার বার বলছে জেলা যুবদল পুলিশ আমাদের হাতে, অভিযোগ তুলে নিতেও চাপ দিচ্ছে নিয়মিত।দোকান গুলো হারিয়ে এখন অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন করছে চা দোকানী এই পার্বতী রাণী। তাছাড়াও তিনি সাংবাদিকদের বলেন আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন তিনি।  তারেক রহমানের বক্তব্যের সাথে মিল না পেয়ে জেলা যুবদল ও জয়দেবপুর থানা পুলিশের আচরণে অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছেন তিনি।  এদিকে এমদাদ শিকদার এবং এনামুল শিকদারের এমন দখলবাজী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ খোদ দলের অনেক নেতাকর্মী। কিছুদিন আগে এনামুল শিকদার ঝুট ব্যবসা দখলে নিতে সশস্ত্র হামলা করলে পুলিশ তাকে আটক করে। সেসময় বিষয়টি নিয়ে দেশে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হলে গাজীপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক এনামুল শিকদার যুবদলের কেউ নয় বলেও প্রেস রিলিজ দেন। এর আগেও ভবানীপুরে ইউনিম্যাক্স কারখানায় ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল নেতাকে ব্যাপক মারধোর করেন এমদাদ ও এনামুলসহ তাদের সঙ্গীরা। সেসময় ছাত্রদল নেতা জসিম অভিযোগ করে বলেন, তাকে মারধোর করার সময় এমদাদ বলেছিলো এই ঝুটের টাকার ভাগ জেলা যুবদলকেও দিতে হয়। তার কোন প্রতিবাদও করেনি সেসময় জেলা যুবদলের পক্ষে। সেই ঝুট ব্যবসা এখন এমদাদ শিকদার করছেন আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক মন্ত্রী রুমানা আলী টুসির আস্থাভাজন আমজাদের সাথে পাটনারশীপে। এমনকি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দখল বাণিজ্য বন্ধের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভবানীপুরে আওয়ামীলীগের পার্টি অফিসকে দখল করে স্বপ্নবাড়ী টিকিট কাউন্টার নামে একটি টিকিট কাউন্টার দিয়েছে এই যুবদল নেতা এমদাদ। পরে অবশ্য সেই টিকিট কাউন্টার তাজুল ইসলাম নামে একজনকে ফাইভ স্টার টিকিট কাউন্টার নামে ভাড়া দিয়েছেন। পরপর এতো অপকর্মের পর তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলো ভাওয়ালগড় ইউনিয়ন যুবদল। অজানা কারণে তার কোন হদিসও পাওয়া যায়নি। এমদাদ ও এনামুল নিজেদের গাজীপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান মোল্লার আস্থাভাজন পরিচয় দিয়েই এলাকায় প্রভাব বিস্তারসহ এসব দখলবাজী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীদের দাবি তাদের এসব কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।  সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে বিএনপির পক্ষ থেকে।এই বিষয়ে জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান মোল্লা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে এমদাদ শিকদারের বিরুদ্ধে নেয়া হবে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা। যদিও ভুক্তভোগী পার্বতী রাণী বলেছেন কয়েক দফায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন যুবদলের কাছে।